December 29, 2024, 8:39 am

পিএইচডি করেও তিনি আজ সবজি বিক্রেতা

অনলাইন ডেস্ক
  • Update Time : Saturday, July 25, 2020,
  • 118 Time View

রাইসা আনসারি, ভারতের মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের ইন্দোরের বাসিন্দা। তিনি মেটেরিয়াল সায়েন্সে পিএইচডি করেছেন ইন্দোরের দেবী অহল্যা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। পরিবারের সাথে ইন্দোরের পরদেশীপুরার বেকারি স্ট্রিটে থাকেন।

পিএইচডি করেও রাইসা ইন্দোরে সবজি বিক্রি করছেন। বৃহস্পতিবার (২৩ জুলাই) সেখানকার পৌরসভার লোকেরা রাস্তার পাশে সবজি বিক্রি করতে তাকে বাধা দেন। এ সময় আনসারি ইংরেজিতে এর প্রতিবাদ জানানোয় বের হয়ে আসে তার শিক্ষাগত যোগ্যতার কথা। তার ভাইবোনরাও বেশ শিক্ষিত এবং চাকরির সন্ধান না পাওয়ায় ফল বিক্রি করেই তারা সংসার চালাচ্ছেন।

এ সময় তাকে এত শিক্ষার পর সবজি বিক্রির কথা জিজ্ঞাসা করলে উত্তরে আনসারি বলেন, “আমি মেটেরিয়াল সায়েন্সে পিএইচডি করেছি। পড়া শেষে বিজ্ঞানী হতে চেয়েছিলাম কিন্তু কোথাও চাকরি পেলাম না। আমি এখানে ফল বিক্রি করি, তবে পৌরসভার কর্মকর্তারা আমাদের বিরক্ত করছেন। আমরা গবাদি পশুর মতো এখান থেকে সেখানে যেতে বাধ্য হচ্ছি।”

ওই প্রশ্নের উত্তরে আনসারি আরও বলেন, ‘আমার প্রথম প্রশ্ন, কে আমায় চাকরি দেবে? করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মুসলিমদের কারণে বেড়েছে এই ধারণা গোটা ভারতে। যেহেতু আমার নাম রাইসা আনসারি, কোনো কলেজ বা গবেষণা প্রতিষ্ঠান আমাকে কাজ দিতে উৎসাহী নয়।’

রাইসা বলেন, “আমরা যে চাকরি পাচ্ছি না, আমাদের ধর্মই সেটার কারণ হতে পারে। কিন্তু আমরা ভারতীয় হতে পেরে গর্বিত। যদিও আমি এখনও একটি চাকরি খুঁজছি।”

রাইসার মা আয়েশা আনসারি বলছিলেন, তিনি নিজে শিক্ষিত নন, কিন্তু তার চার সন্তানের সবাই অনেক পড়াশোনা করেছে, কিন্তু কেউ চাকরি পায় নি। তার চার সন্তানের মধ্যে তিন মেয়ে এবং এক ছেলে।

আয়েশা বলেন, “আমার চারটি সন্তান রয়েছে এবং তারা ভাল শিক্ষিত। আমি পড়াশোনা করিনি, তবে আমার সব সন্তান শিক্ষিত। কিন্তু তারা চাকরি পায় নি, তাই তারা সবাই ফল বিক্রি করে।”

আয়েশা আরও বলেন, “বিষয়টি যখন বিয়েতে আসে, এক কন্যার বিয়ে হয়েছিল। রাইসা এবং শাহজাহান দ্বি’ও একটি শিক্ষিত ছেলে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাদের বর্ণের কারণে তারা উপযুক্ত মিল খুঁজে পাচ্ছিলেন না এবং কখনও কখনও তারা যৌতুকের কারণেও প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তারা এখনও সিঙ্গেল আছেন। আমার দু’জন নাতি-নাতনি জীববিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করছেন। তারা চিকিৎসক হয়ে উঠবেন।”

এদিকে, আশেপাশের লোকেরা পরিবারটির দক্ষতার প্রশংসা করেছেন। তারা বলেছিলেন যে তারা শিক্ষিত হয়েও চাকরি না পাওয়ায় ফল বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছিল।

মহামারি করোনার কারণে সারা বিশ্বেই চাকরি ও কর্মসংস্থান হারিয়েছেন লাখ লাখ মানুষ। এদিক থেকে সবচেয়ে বিপদে পড়েছেন দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশের মানুষেরা। সেখানে কর্মজীবীদের হাঁসফাঁস অবস্থা।

ভারতও এর ব্যতিক্রম নয়। আবার যদি করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মুসলিমদের কারণে বেড়েছে এই ধারণা বদ্ধমূল হয়। তাহলে তো কথাই শেষ।

এমন পরিস্থিতিরই শিকার রাইসা আনসারি। মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের ইন্দোরে সবজি বিক্রি করার সময় পৌরসভার লোকদের বাধা প্রতিবা জানান ইংরেজিতে। সেই ভিডিও মুহূর্তেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়ে।

জানা গেছে, রাইসা আনসারি মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরেরই বাসিন্দা। তার ইংরেরি শুনে সেখানে উপস্থিতরা হতবাক। এ সময় লোকজন তার শিক্ষাগত যোগ্যতা জানতে চান। উত্তরে তিনি বলেন,  তিনি ইন্দোরের দেবী অহল্যা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেটেরিয়াল সায়েন্সে পিএইচডি করেছেন।

ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে প্রতিবাদে তিনি বলছেন, বাজার বন্ধ। খরিদ্দার নেই। আমি রাস্তার ধারে গাড়ি নিয়ে ফল ও সবজি বিক্রি করি। কিন্তু পৌরসভার লোকেরা সেটাও করতে দিচ্ছেন না। আমার পরিবারের ২০ জন সদস্য। কী করে রোজগার করব? কী খাব? কী ভাবে বাঁচব?

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম অবলম্বনে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: রায়তা-হোস্ট
tmnews71